আমাদের সমাজে মা বাবার পর গুরুর স্থান শিক্ষককে দেওয়া হয়। বর্তমান সময়ে আমাদের রাজ্যে শিক্ষকদের সম্মান ধুলোতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। অনেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে স্কুলের ছাত্রছাত্রী সহ অভিভাবকরা শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করছে, এই সবের মূল কারণ হল শিক্ষা নিয়ে বাংলার ভয়াভয় দুর্নীতি। ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়া থেকে শুরু করে পরীক্ষার খাতায় দুর্নীতি করে রাজ্যে অনেকেই চাকরি পেয়েছে সেটা জলের মতো পরিষ্কার।
রাজ্যে এখনো গ্রামের স্কুলগুলিতে পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে, এখন আর কেউ গ্রামে থাকতে চাইছে না ট্রান্সফার নিয়ে শহরের দিকে চলে যেতে চায়। শিক্ষা প্রাঙ্গনে এই সমস্যা এখানেই শেষ নয়, পরীক্ষায় ফেল করার পরেও টাকা দিয়ে শিক্ষক হয়ে মোটা টাকা বেতন পাচ্ছেন। আমাদের পাশের রাজ্য বিহার যেখানে শিক্ষার অবস্থা খুব খারাপ বলা হয়, তারা কিন্তু এই সমস্যার সমাধান করে দেখিয়েছে।
বিহারের শিক্ষা দপ্তর এই সমস্যা সমাধানের জন্য একটি বিশেষ নিয়ম চালু করেছে। যেখানে শিক্ষকদের শিক্ষা কেন্দ্র থেকে ১৫ কিলোমিটার এর মধ্যে বসবাস করতে হবে। যদি নিজের বাড়ি থাকে তাহলে ভালই হয় না হলে ঘর ভাড়া নিয়ে এই নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে থাকতে হবে। এই ১৫ কিলোমিটার দূরত্বের বাইরে থাকলে চাকরি চলে যাবে। এই নিয়মের প্রধান উদ্দেশ্য হলো গ্রামের স্কুলগুলিতে শিক্ষকের যে অভাব রয়েছে তা দূর করা।
বিহারের শিক্ষা দপ্তরের মুখ্য সচিব K K Pathok সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলিতে শিক্ষকদের ১৫ কিলোমিটাররে মধ্যে থাকতে হবে। যে সব শিক্ষক এই নিয়ম মানতে পারবে তাদের ভালো, যারা এই নিয়ম মানতে পারবে না তারা অন্য ব্যবস্থা দেখে নিতে পারে। এক্ষেত্রে কোনো রকম আপত্তি শোনা যাবে না এমনটা বলেছেন মুখ্য সচিব।
বিহার সরকার BPSC-এর মাধ্যমে অনেক তরুণ তরুণীকে শিক্ষক পদে নিয়োগ করেছে। যদিও সেই সব চাকরি প্রার্থীদের গ্রামের দিকে চাকরি করা নিয়ে একটু অনীহা রয়েছে। বিহার সরকার গ্রামের স্কুলের শিক্ষকের সংখ্যা বজায় রাখার জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এখানে পরিষ্কার ভাবে বলা হয়েছে এই নিয়ম না মানলে চাকরি খোয়াতে হবে।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু কিছু মাস আগেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে শিক্ষক বদলি সংক্রান্ত নিয়ম কঠোর করার জন্য বিশেষ নির্দেশিকা দিয়েছেন। রাজ্যের শিক্ষা দফতর বিষয়টির গম্ভীরতার কথা ভাবে ইতিমধ্যে কাজ চালু করেছে। যদিও এই বিষয় নিয়ে রাজ্যের তরফ থেকে সেই রকম কোনো নির্দেশিকা দেওয়া হয়নি। সূত্র অনুযায়ী চাকরির প্রথম ৫ বছর গ্রামের স্কুলে পরিষেবা দিতে হবে রাজ্যের সরকারি শিক্ষকদের।