বাংলাদেশে দিন দিন ডেঙ্গু আক্রান্তদের সংখ্যা এবং মৃত ব্যক্তিদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রাজধানী ঢাকায় সমস্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৯ শতাংশ ঢাকাতেই হয়েছে এবং ঢাকার বাইরে বাকি ৩১ শতাংশ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
ডেঙ্গু আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিদের সংখ্যা বছরের শুরু থেকে এই শনিবার পর্যন্ত পরিসংখ্যান করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ভয় সৃষ্টি করেছে এমনটা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
গুরুতরভাবে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ঢাকার বাইরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পাওয়ার ফলে স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলি ঢাকায় রেফার করে দিচ্ছে। কিন্তু সময় কম থাকায় ঢাকায় চিকিৎসার জন্য এলেও রোগীদের বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না ফলে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।
গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিদের তালিকায় আরো ১৪ জনের নাম যুক্ত হয়েছে। এই সংখ্যা যোগ হবার পর বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর সংখ্যা ৮০০ পার করে গেছে। আগের বছরে ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যু বেশি হলেও কিন্তু এইবারে বিভাগ জেলাগুলিতে রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।
সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী
এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগী হয়, সরকার এই রোগবাহি মশা নির্মূলের কাজ করে চলেছে তবে বিশেষজ্ঞদের মতে আরো দ্রুত নির্মূলে কাজ করতে হবে, না হলে এই ডেঙ্গু রোগ মহামারি রোগ ধারণ করতে পারে। তবে বর্তমান সরকার এই ব্যাপারে জোড়-কদমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
জেলাগুলিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত ব্যাক্তিদের সংখ্যা
স্বাস্থ্য দপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যুহা ১৪ জন ব্যক্তিকে যোগ করলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়ে ৮০৪ জন হয়েছে। এই মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৫২ জন অর্থাৎ ৬৯ শতাংশ রাজধানী ঢাকায় মারা গেছেন। এবং ঢাকার বাইরে ২৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এই বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে ১৪ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে আক্রান্ত ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, এই পরিসংখ্যার মধ্যে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৭২ হাজার ৩৮৪ জন এবং রাজধানী ঢাকার বাইরে ৯২ হাজার ১৭৮ জন আক্রান্ত ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
সরকারি পরিসংখ্যান যদি ভালোভাবে দেখা যায় সেখানে চলতি বছরে ঢাকার সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ২০ হাসপাতালে ৪২ হাজার ৩৭৫ জন ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন, এর মধ্যে ৩৯৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকার ৫৬ টি বেসরকারি হাসপাতালে ৩০ হাজার রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং ১৫৪ জনের এই ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যু হয়েছে।
রাজধানী ঢাকা ছাড়া এই বিভাগের হাসপাতাল গুলিতে ২৪ হাজার ৬৪ জন ভর্তি হয়েছে এবং এদের মধ্যে ৪৫ জন মৃত্যু হয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগের ৮ হাজার ৬৬১ জন ভর্তি হয়েছে এবং ১০ জন মারা গেছে।
চট্টগ্রাম বিভাগে আক্রান্ত ২৩ হাজার ৪৮৭ জন ভর্তি হয়েছে এবং ৭১ জন মৃত্যুবরণ করেছে। খুলনা বিভাগে ১০ হাজার ১৫১ জন ভর্তি হয়েছে এবং এদের মধ্যে ৩৬ জন মারা গেছে। রাজশাহী বিভাগের ৬ হাজার ১৬৬ জন ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং এদের মধ্যে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
রংপুর বিভাগের হাসপাতালে ৩ হাজার ২৭৩ জন ভর্তি হয়েছে এবং ৪ জন মারা গেছে। বরিশাল বিভাগের ১৯ হাজার ১৬১ জন ভর্তি হয়েছে এবং এদের মধ্যে ৭২ জন মারা গেছেন। সিলেট বিভাগে আক্রান্ত ১ হাজার ৭১৭ জন ভর্তি হয়েছেন এবং একজনের মৃত্যু হয়েছে। দেশের এই আটটি বিভাগের মধ্যে ভর্তির সংখ্যা সব থেকে বেশি ঢাকায় এরপর চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে।
ডেঙ্গু কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে
বিশেষজ্ঞরা জানান জমে থাকা জল তিন দিনের বেশি সময় থাকলে এডিস মশা এখানে ডিম পেরে বংশবিস্তার করতে পারে। একটি এডিস মশা একদিনে কমপক্ষে ৮ জন সুস্থ মানুষকে কামড়ে এই রোগে আক্রান্ত করতে পারে। খারাপ বিষয়টি হলো মশা নিধন দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত সিটি কর্পোরেশন এবং ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সকলেই একে অপরের উপর দায় চাপাচ্ছে।
কীটনাশক প্রয়োগের সঠিক প্রশিক্ষণ না থাকায় মশা গুলির আচরণগত পরিবর্তন এবং শারীরিক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে, যার ফলে সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে বিষয়টা অনেক গম্ভীর আকার ধারণ করতে পারে। এখানে মশা মারার জন্য হিলিষ্টিক অ্যাপ্রচের সঠিক প্রয়োগ জরুরী।
এই পদক্ষেপগুলি কার্যকর করতে একটি বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে এবং উন্নত গবেষণাগার ও গবেষক নিয়োগ করতে হবে। এডিস মশার সংখ্যা কমলে ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা এবং মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ন্ত্রনে আনা যাবে।
হঠাৎ করে যদি জ্বর চলে আসে এবং গাবমি হয় তাহলে অবশ্যই রক্তের পরীক্ষা করা দরকার এই ব্যাপারটিকে একদম এড়ানো যাবে না। প্রত্যেক হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্ত করার বিশেষ ওয়ার্ড রাখতে হবে এই পদক্ষেপগুলি কার্যকর করলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা কমানো যাবে এবং মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে।